১। দ্রবীভূত অক্সিজেনঃ
মাছ চাষীরা চাষকালীন সময়ে প্রধানত যে সমস্যার প্রায়শই সম্মুখীন হয় তা হলো পানিতে অক্সিজেন সমস্যা।এটিই মাছ চাষের অতি পরিচিত এবং প্রধান একটি সমস্যা।
মাছ চাষের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অত্যানুকূল মাত্রা হলো ৫ পিপিএম। অক্সিজেনের মাত্রা এর চেয়ে নিচে হলে মাছের অক্সিজেন ঘাটতি দেখা যায় এবং অত্যাধিক কম মাত্রায় নেমে আসলে মাছ মারা যায়।
লক্ষণঃ
- ভোর বেলা সূর্য উঠার আগে পুকুরে মাছ জেগে থাকে এবং খাবি খায়।
- অনেক সময় মাছ মরে ভেসে থাকে।
- মেঘলা আকাশ থাকলে দিনের যেকোন সময়ে মাছ ভেসে থাকে এবং মারা যায়।
- ভেসে থাকা মাছগুলোকে দেখলে নির্জীব মনে হয়।
- মরা মাছে মুখ খোলা অবস্থায় থাকে।
অক্সিজেনের ঘাটতি কি কি কারণে হয়ঃ
- দিনের বেলা সূর্যালোকে পুকুরে সবুজ উদ্ভিদ পানিতে অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা মাছ সহ অন্যান্য জলজ প্রাণি গ্রহণ করে। রাতের বেলা পুকুরে কোন অক্সিজেন উৎপন্ন হয় না। তাই সারারাত মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ দিনের বেলা উৎপন্ন সকল অক্সিজেন গ্রহণ করে ফেলে তাই ভোর বেলা পুকুরের পানিতে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যদি মেঘলা আকাশ থাকে তবে অক্সিজেন ঘাটতি আরো প্রকট হয়ে উঠে।
- পুকুরে অতিরিক্ত পচনশীল দ্রব্য বা অতিরিক্ত খাবার ব্যবহার করলে সেগুলো পচানোর জন্য অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন পরে যা পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে।
- ফাইটোপ্ল্যাংকটন ব্লুম এর কারণে অক্সিজেন ঘাটতি হয়।
- পানিতে জলজ উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাংকটন এর পরিমাণ কম হওয়া।
- পুকুরের পারে বড় বড় গাছপালা থাকা এবং দিনের অধিকাংশ সময়ই পানিতে ছায়া পড়া।
- পুকুরের গভীরতা অত্যাধিক হওয়া।
- পানি ও মাটিতে আয়রণের পরিমাণ বেশি হওয়া।
- পুকুরের তলায় গ্যাস হলে তা বুদবুদ আকারে পানিতে ভেসে উঠে এবং উক্ত বুদবুদের সাথে অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে চলে যায়।
- এছাড়া মাছের ফুলকাজনিত কোন রোগ হলে বা পানিতে ঘোলাত্বের পরিমাণ অত্যাধিক হলে মাছের অক্সিজেন গ্রহণে সমস্যা হয় এবং মাছ মারা যায়।
করণীয়ঃ
- সকাল বেলা যখন মাছ ভেসে বেড়াবে তখন পুকুরের পানিতে ওয়েভ তৈরি করা । এক্ষেত্রে পানিতে নেমে সাঁতার কাটা বা বাশ দিয়ে পানিতে আঘাত করা যেতে পারে।
- এয়ারেটর স্থাপন করা এবং রাতের শেষভাগে এয়ারেটর চালানো।
- নতুন পানি পুকুরের পানিতে প্রবেশ করানো।
- ইমার্জেন্সি মুহূর্তে অক্সিজেন ট্যাবলেট বা পাউডার ব্যবহার করলে উপশম পাওয়া যায়।
- পুকুরের পারের বড় গাছাপালা কেটে ফেলা যেনো পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়ে।
- পানির গভীরতা ঠিক রাখা। (৫-৬ ফিট)
- অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগ না করা।
- ঘন সবুজ শেওলার স্তর অপসারণ করা।
- পচনশীল দ্রব্য অপসারণ করা।
- তলার গ্যাস অপসারণের জন্য প্রতি ৭-১০ দিন পর পর হররা টানা।
- পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মানোর জন্য পরিমিত হারে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা।
- মাছের ফুলকাজনিত রোগের জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করা।
যোগাযোগঃ
পুকুরে অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিলে উল্লেখিত পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনে নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন।
মোঃ মেহেফুজুল ইসলাম
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
মোবাইলঃ ০১৩০৩-০২৪৪০৩
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS